প্রায় প্রতি সপ্তাহের ছুটির দুটো দিনের সন্ধ্যেবেলা লাইব্রেরিতে তার সাথে দেখা হয়, নিয়মিত দেখা হয় বলেই মুখ চেনা, সামনা সামনি কখনো পড়ে গেলে চোখের যে ইশারায় “কেমন আছি, খবর ভালো তো” বুঝানো হয় সেই ইশারা হয়। দেখা হবার প্রায় প্রতিটা দিনই ভাবি তার সাথে আজকে কথা বলব, কিন্তু কখনো হয়না সেটা। মাঝে মাঝে এক কাউন্টার থেকেই দুজন বই নেই, জমা দেই, তখনো কথা হয়না, ছোট একটা হাসি দিয়ে সে আমি দুজনই বই নিয়ে যে যার পথ ধরি। হঠাৎ করেই গাণিতিক সম্ভাব্যতার আজব সূত্র মিলে গিয়ে কিভাবে যেন এক কাউন্টারে দুজনেই একই বই চয়েস করে ফেললাম “শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান”। লাইব্রেরিয়ান বৃদ্ধ ভদ্রলোক দুজনের দিকে চেয়ে বললেন ” একটা কপিই রয়েছে, কে নেবেন বলুন।” আমি কিছু বলার আগেই, মেয়েটা ছোট মৃদু হেসে বলল- ” আপনি নিয়ে নিন, আপনার পড়া শেষ হলে আমি নিয়ে নেব।” অন্য আর কি যেন একটা বই তার নেবার ছিল সেটা নিয়ে সে আর কিছু না বলেই চলে গেলো। আমি তার পথের পানে চেয়ে রইলাম, বৃদ্ধ সেই ভদ্রলোক আমার নাম এন্ট্রি করছেন, আর আমি ভাবছি আজো মেয়েটার সাথে কথা বলা হলোনা, ভীতু এবং মধ্যবিত্ততার সংকচে আবদ্ধ এই আমি কেন জানি কখনো তাকে নিজে থেকে কিছুই বলতে পারলাম না, খুব ইচ্ছে করে তাকে বলি, “জগতের সব ভূবন ভোলানো বইয়েরা এক পাশে থাক, আমি সে সব ছুয়েও দেখবোনা, আমি শুধু তোমাকে পড়তে চাই, পুরোপুরি ভাবে পড়ে ফেলতে চাই তোমাকে, পড়ে নিয়ে তোমাকে গেথে নিতে চাই আমার এই মননে, মস্তিষ্কে।” কিছু ব্যাপার কখনোই হয়ে ওঠেনা, এক বুক ভরা আফসোস নিয়ে আমিও বের হয়ে যাই লাইব্রেরি থেকে। রাস্তার দুপাশে নিয়ন হলুদ বাতির আলোতে হটাৎ অদ্ভুত বোধেরা ফিরে আসে, মনে হয় ” তোমাকে পড়ে দেখবার সুযোগ পেলে জীবনের গল্পটা অন্য রকমও হতে পারতো।”
অণুগল্প
- admin
- November 9, 2024
- 0 Comments
- Uncategorized
- 0