গল্প – ২ – কৃষ্ণচূড়া
বৈশাখ মাসের এক দুপুরে হঠাৎ করেই কাল বৈশাখী নেমে এলো, আমি গিয়ে ঠায় নিলাম বাস দাড়াবার ছাউনিতে। আমার সাথে সাথেই একটা মেয়েও ঢুকে পড়ল, অদ্ভুত হলেও সত্য আমি তাকে চিনি, প্রায় রোজই তাকে দেখি, ইচ্ছেই দেখা না, অনিচ্ছাকৃত দেখা।, আমি বাড়ি থেকে বের হবার পথে তাদের তেতলা বাড়ি। সেই বাড়ির বারান্দায় সে দাড়িয়ে রয়। তার দীঘল কালো চুল, আজ অবশ্য চুল ঢেকে রয়েছে হিজাবের মাঝে। ঝুম বৃষ্টি নেমে গেলো, জল ছাট থেকে বাচতে আরো একটু কাছা কাছি দাড়াতে হলো আমাদের। মেয়েটা নিজে থেকেই মৃদু এক হাসি দিয়ে বলল-“রোজ পথ দিয়ে যাবার সময় আমাকে লুকিয়ে দেখেন তাই না, উপরের দিকে তাকিয়ে রয়ে পথ টুকু পার হন, নিচে তাকিয়ে পথ চলবেন না হলে কোন দিন হোচট খেয়ে পড়ে যাবেন।” আমি চুপ করে রইলাম। তাকে বলা হলো না, বৈশাখ মাসের এই সময়ে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে, তীব্র লাল এই ফুল আমার বুকের মাঝে হাহাকার তুলে দেয়, তোমার বাড়ির পাশেই কৃষ্ণচূড়া গাছ, কোন এক অদ্ভুত কারনে তার ফুল ফোটে সিজন শেষ হবার বেশ কটা দিন পরে। আমি রোজ পথ হাটি আর উপরে তাকিয়ে দেখি গাঢ় লাল রঙে আকাশ ছেয়ে গেছে কিনা। সুন্দরী মেয়েদের মুখের উপর সত্য বলতে নেই, এটাই জগতের নিয়ম তাই মাথা নিচু করে থাকতে হয়। জগতের আরও এক নিয়ম হলো মানুষ হয়ে জন্মালে গাছেদের, ফুলেদের, প্রকৃতির সৌন্দর্য ভুলে যাওয়া। মাথায় কিছু বিভ্রাট আছে বলেই হয়তো আবার উপরে তাকানো হবে, দীঘল কালো চুল, সুশ্রী মুখশ্রী আমায় টানবে না। কৃষ্ণচূড়ায় ঢাকা রক্তিম আকাশের টানে হোচট খাবো, কিন্তু সবাই ভাববে নির্লজ্জের মতো বারান্দায় তাকিয়ে পড়ে গিয়েছি। ভুল ভাবুক সবাই, আমি আর কৃষ্ণচূড়া দুজনে ঠিক ঠাক ভাবনাটা নিজেদের মাঝেই পুষলাম না হয়।