মানুষ জীবনে কত কিছু চায়, বড় চাকরি, বড় গাড়ি, বিশাল অট্টালিকা, প্রমোদতরী, পারসোনাল জেট কতশত চাওয়া। বিশ্বাস করেন আর না করেন আমার জীবনে এই সব চাওয়া পাওয়া তেমন ভাবে আসেনাই কখনোই। আমার খুব ইচ্ছা নির্জন নিরিবিলি একটা স্থানে চলে যাবো। কাঠের গুড়ি দিয়ে মাটি থেকে বেশ উচু করে একটা ছোট ঘর বানাবো। বাড়ীর চারপাশ দিয়ে ছোট খানিকটা জায়গা কাঠের বেড়া দিয়ে ঘিরে নেব, ঐ যে হলিউডের মুভি তে রিমোট এরিয়ার বাড়ি গুলো যেমন ঘেরা থাকে সেই রকম হবে। দুটো গাভীন গরু পালবো বাছুর সহ৷ মন ভালো থাকলে বাছুরের লেজ ধরে খানিকটা ছুটো ছুটি করব। দৌড় ঝাপ করলে স্বাস্থ্য টাও ভালো থাকবে৷ ছাগল পুষব গোটা ছয়েক। বাড়ির সামনে খুব ছোট করে একটা পুকুর কাটাবো। সেই পুকুরের জল হবে কাকচক্ষুর মতো পরিষ্কার। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে যেদিন সূর্য মাথার উপরে এসে রোদ বিলাবে সেদিন সেই কাকচক্ষু জলে মহিষের মত ডুবে থাকবো। হাস মুরগী পালবো না এরা জায়গায় বেজায়গায় পায়খানা করে খুব নোংরা করে দেয়। কবুতর এর ঘর করে দেবো। সন্ধ্যা আর সকাল করে এদের ঘরের কাছে খানিকটা সময় থেকে বাকবাকুম শুনবো। একটা মোটা গাবদা গোবদা বিড়াল থাকবে, যে সারাটা দিন শুয়ে থাকবে আর তিন বেলা মিউ ম্যাউ মিউ বলে খাবারের সময়ের অ্যালার্ম দেবে। আমার পাশে পাশে ঘুরবে। বাড়ির চার পাশ দিয়ে অল্প কিছু জমি নিয়ে ধান, গম সবজি লাগাবো সিজন বুঝে। অনেকদিন চুল দাড়ি না কেটে বড় করে ফেলবো বাউল দের মত। কোন কোন দিন প্রবল বৃষ্টি হবে। সেই বৃষ্টিতে তে দীর্ঘ সময় ভিজে এসে ঘরের কাঠ বারান্দায় বসবো। বৃষ্টি থেমে যাবে একটা সময়, আমার লম্বা চুল দাড়ি বেয়ে জল গড়িয়ে যাবে আরো বেশ কিছুটা সময়। বৃষ্টির জল ধরে রাখবো, সেই জল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করবো একটা ডিম ভেজে নিয়ে অমৃত সম ভোজন হবে। ডায়নামো লাগানো একটা সাইকেল কিনবো, সেই সাইকেলে করে সপ্তাহে এক দিন হাটে যাবো সদাই নিয়ে ফিরে আসবো। সন্ধ্যা হয়ে গেলে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকে যাবো, আমার ছোট ঘরে বই থাকবে অনেক, রাত হয়ে গেলে হ্যারিকেনের সলতে টা বারিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে বই পড়বো, আমার বিড়াল টা পাশে এসে শুয়ে থাকবে। ওর সাথে একা একা কথা বলবো- “কিরে বেটা আজকের রাতের খাবার কেমন হল, তুই তো মোটা হয়ে যাচ্ছিস, একটু শরীর টরীর নাড়া চাড়া দে।” সে কিছুই বুঝবে না, আদর পেয়ে চোখ বুঝে রাখবে। বেশ রাত অব্দি হ্যারিকেন জ্বালিয়ে অল্প আলোতে ভুবন ভুলানো বই এর জগতে ডুবে থাকবো। এরপর নয়ন জূরে ভরা বানের ঢেউ এর মত নিদ্রা এলে ঘুমিয়ে যাবো। মাঝে মাঝে পূর্ণিমার রাতে কাঠ বারান্দায় বসে ফিনিক ফোটা জোছনার আলো গায়ে মাখবো। সেই আলো হৃদয় কে আদ্র করে দেবে।
আমি আমার এক জীবনে কখনো তেমন বড় কিছু চাইনাই, চাই নাই সুন্দরী প্রেমিকা, হৃদয় শান্ত করা সংগীনী, চাইনাই অঢেল অর্থ, চাই নাই ক্ষমতা, আজিবন নির্মল নির্জনতায় উপরের বর্ণনার মত একটা শান্তির জীবনে চেয়ে গেছি। যে জীবনে কোন চিন্তা ভাবনা থাকবে না। জীবন শুকিয়ে যাবার আগে করূনাময় এর করুণা ধারায় জীবন পূর্ণ হোক অসীম শুদ্ধতায়।