সে আর আমি মাসে একদিন ছুটির দিনে দেখা করি বিকেল বেলা। প্রধান উদ্দেশ্য হল আড্ডা দেয়া। তবে প্রায় প্রতিবারই আড্ডা বিরোধে রুপ নেয়। আমরা ঝগড়া করতে করতে যে যার পথ দেখি। এই ব্যাপারটা এতটাই বেশি ঘটে যে আমড়া যেখানে দেখা করি সেখানে পৌছে দুই জন দুই জনের বাইক দুই মুখ করে রাখি যাতে যাবার কালে কারও সাথে কারও না বাধে। এইতো সেদিনও গিয়েছিলাম। আমাদের মাঝে কখনওই সৌজন্যমূলক কথা কেমন আছি, কি করছি এই সব কথা হয়না। কারন দুজনেই আমরা বেশ ভালই জানি আসলে কেমন আছি। যাইহোক আমাদের কথোপকথন এর একটা নমুনা দেই।
সে-জীবনে কোন কিছু হইল না। প্রেম, ভালবাসা, ট্যুর, বিদেশি তরল খেয়ে নাচা গানা এঞ্জয় কোন কিছুই না।
আমি- তুই যেমন ছেলে তাতে বিদেশি তরল তোর সইবে না। বাংগালির ছেলে জল মুরি খাবি আর চোখ বুজে অফিস করবি।
সে- আমার সহ্য হবেনা আর তোর সহ্য হবে। তুই তো বাকিমহাম প্যালেস এ মানুষ হয়েছিস। পিঞ্চ মারা কথা বাদ দে। জীবনে সব চেয়ে বড় আফসোস কি আমার জানস।
আমি- কি তোর আফসোস শুনি
সে- আমার সবচেয়ে বড় আফসোস হল আমি লাইফে টাকা করতে পারলাম না। অনেক টাকা প্রচুর টাকা এর মালিক যদি হতে পারতাম
আমি- বৎস এই আফসোস বংগদেশ এর ষোল কোটি মানব সন্তানের সবার
সে- আচ্ছা বলত সহজে প্রচুর টাকা কিভাবে করা যায়
আমি-সেটা জানা থাকলে তোর মত হাবলার সাথে আড্ডা দিতাম না
সে- আমার কাছে সহজে টাকা করার দুইটা ওয়ে আছে। অনেক ভেবে চিনতে বের করেছি।
আমি নড়ে চড়ে বসি তার কথায়। টাকা করার সহজ উপায় বাতলে দেবে, এই কথা শুনলে যে কোন বাংগালীর রক্তই গরম হতে বাধ্য। আমি উতসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করি,
আমি-কি উপায় বলতো
সে- হয় ব্যাংক ডাকাতি করতে হবে না হয় নিজেই টাকা ছাপাতে হবে
আমার উচ্চকিত উতসাহ দমে যায়।
আমি- দূর শালা কি কস। দুইটাতেই পুলিশ এর বাটাম খেতে হবে। বাটাম টলারেট করে টাকা করার দরকার নায়
সে- এই ভয় এর জন্যই তোর কোনদিন কিছু হবেনা।
আমি- আমার হবেনা তোমার খুব হবে। কর তুই দেখি, কত ডাকাতি, আর কত নোট তুই ছাপাতে পারিস
সে- আর একটা ওয়ে অবশ্য আছে টাকাওয়ালা হবার।
আমি আবার আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করি
আমি-কি ওয়ে
সে- খয়রাতি ওয়ে। প্রচুর টাকাওয়ালা এমন কাউকে খুজে বের করা যে তোকে বিশ কোটি টাকা খয়রাত দেবে। দেশে হুলুস্থুল এমন বড়লোক অনেক আছে যাদের কাছে বিশ কোটি কিছুইনা।
আমি- তোর আজকে হোয়ছে কি বলতো। আজগুবি আলাপ করতেছিস। আসলেই বিদেশি তরল খায়সোস নাকি।
সে- আরে না। আমি হারাম খাবারের মাঝে নাই।
আমি- কাম সারছে, হিমালয়ের সাধু চলে আসছে। আচ্ছা দোস্ত এমন লোক কি আসলেও আছে যে বিশ কোটি টাকা দান করে দেবে? আমার অবশ্য বিশ কোটি লাগবে না। দশ কোটি হলেই চলবে।
সে- আচ্ছা ধর তুই দশ কোটি টাকা পেলে কি করবি।
আমি- যাই করি তোর সাথে মিশবোনা।
সে- এইটা কি বললি তুই। অবশ্য তোকে কি বলব দশ কোটি টাকা হলে আমিও তোর সাথে মিশবো না।
আমি- আসলেই কি টাকা করার আর কোন ওয়ে নাইরে।
সে- আছে তো
আমি- কি বলতো
সে- ঐযে প্রাইভেট কারে যে মেয়েটা যাচ্ছে তাকে পটাবি দেন তোর বাইকে নিয়ে ঘুরবি, বিয়ে করবি তাতেই হবে, শ্বশুরের টাকায় বড়লোক হবি। অবশ্য তোর যে বাইক আর তোর যে বাইক চালানোর হাত তাতে কোন মেয়ে কেন কোন শক্ত সমর্থ পুরুষও তোর পিছে বোসবে না।
আমি- ও তাই নাকি, আমার বাইক খারাপ আর তুমি হায়াবোসা চালাও তায়না। আর তুই যে কেমনধারা ড্রাইভার তাতো আমার জানা আছে, রাতে বাইক চালাইনা, রাস্তায় ট্রাফিক বেশি হলে বাইক বের করা যাবেনা, কত কীর্তি তোমার দেখছি। পারনা *ালটাও ভাব ধর মটো রেস চ্যাম্পিয়ন।
সে- এই জন্যই তোর লগে দেখা করতে চাইনা। বুঝোসনা কিছু হুদাই তর্ক লাগাস।
আমি- এই জায়গায় বুঝার কি আছে?
সে- আছে অনেক কিছু।
আমি- কি আছে বল, তুই নিজেই কি বুঝোস আর আমারে কি বুঝাইবি?
এর পরের কথোপকথন হয় আমাদের অনেকটা রাস্তার ভাষায়। আমরা অল্পতেই রাগে দিশা হারিয়ে ফেলি, কোনদিন আর দেখা করবনা এই পণ করি এবং বরাবরের মত নিজের বাইক নিয়ে নিজের পথ ধরি।