ঋতু হিসেবে শরত কালের রুপ হয়ত গ্রাম দেশে দেখতে পাওয়া যায়। ঢাকা শহরে শরত কালের রুপ কোন দিনই দেখা যায়না। বরং ভাদ্র আশ্বিন মাসে শহর ঢাকা তীব্র দাবদাহ ধারন করে। সেই তীব্র রোদ আর জ্যাম উপেক্ষা করে ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা করাটাও একটা কঠিন কাজ। এবং সেই দেখা করবার সময় টা যদি হয় মধ্যদুপুর তাহলে তা একটা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই রকমই এক মধ্যদুপুরে সে আমাকে দেখা করার জন্য বলল। আমরা দুজনেই চাকরি করি ঢাকা শহরে। আমাদের বছর দুয়েকের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক বেশ দ্রুতই ভালোভাবে এগিয়েছে বলেই আমরা তা সারা জীবনের জন্য টেনে নেবার পরিকল্পনা করা শুরু করেছি। আর কটা দিনে আর একটু স্ট্যাবল হলেই আমরা একসাথে নতুন জীবন শুরু করবো। সে আমাকে যখন আগের রাতে বলল কালকে দুপুরে তার সাথে লাঞ্চ করবার জন্য আমি বেশ অবাক হলাম। তার নিজেরও অফিস আছে, সে অফিস কামাই করে কেন হঠাৎ এইভাবে জরুরি তলব করছে তা আমি জানি না। আমি না করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্ত যখন সে বলল-” তুমি প্লিজ আসো, খুব জরুরি কিছু কথা আছে। না করো না প্লিজ।” আমি তখন তাকে উপেক্ষা করতে পারলাম না। কোন অচেনা অজানা মুটামুটি সুন্দরী মেয়ে যদি আপনাকে রিকুয়েস্ট করে সেই রিকুয়েষ্টই আমরা ছেলেরা উপেক্ষা করতে পারি না, এটা তো ভালোবাসার মানুষ। আমি তাকে বললাম যে সময় মত আমি পৌছে যাব।
সময়মত পৌছে যাবো বললেও আমি সময় মত সেখানে যেতে পারলাম না। অফিস ম্যানাজ করে আমি ঠিক সময়েই বেড়িয়ে গিয়েছি, অফিসের প্রায় সকলেই অবাক হয়েছে আমার বেড়িয়ে যাওয়া দেখে, কারন এই তীব্র গরমে মধ্যদুপুরে সেন্ট্রাল এসি ছেড়ে বের হওয়ার মানুষ আমি না। ঘোর দুপুর বেলা জ্যামে আটকে গেলাম। অরিত্রি আমাকে পুলিশ প্লাজার পাশেই একটা নাম করা আপার ক্লাস পিপলদের রেস্টুরেন্টে ডেকেছে। এতো নামীদামী রেস্টুরেন্টে ডাকার কারন মনে হয় ইম্পর্টেন্ট কথা। সে আর আমি মিডলক্লাস রেস্টুরেন্টে বসি, খুব আপার ক্লাস, লাক্সারিয়াস জায়গায় কমই বসা হয়। আমি পুলিশ প্লাজাতে বাইক রাখলাম। এর পর সেই রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। অরিত্রি বসে আছে কোনার দিকের একটা টেবিলে। সে কচি কলাপাতা একটা শাড়ি পড়েছে। তার হাতে ম্যাচ করে পরা সবুজ চুড়ি। চুল ছেড়ে রেখেছে। তার চোখে ভারী পাওয়ারের চশমা। আমি দেরী করে এসেছি এটা নিয়ে সে কিছুই বলল না। মৃদু একটা হাসি দিলো সে। আমি তার এই হাসি দেখে মুগ্ধ হলাম। এই মেয়ের হাসি সুন্দর। তার চোখ দুটো তার হাসি থেকেও বেশি সুন্দর কিন্ত তার চোখ সর্বদায় ঢাকা থাকে ভারী পাওয়ার এর চশমাতে। সে চশমা ছাড়া কিছু দেখতে পায়না। আমি তাকে মাঝে মাঝেই বলি তুমি চশমা খুলে কিছুক্ষন বসোতো আমার পাশে। সে তার পুরো জগত অন্ধকার করে চশমা খুলে বসে থাকে। আমার এত ভালো লাগে তখন। তার সাথে টুক টাক কয়েকটা কথা হতে হতেই ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো। আশ্চর্য ব্যাপার প্রতিটি আইটেমই আমার পছন্দের। সে বেছে বেছে আমার পছন্দের খাবার গুলোই অর্ডার করেছে। আমি মনে মনে বুঝে গেলাম এবং ধরেই নিলাম যে সে আজকে আমাকে, আমাদের বিয়ের ব্যাপারে বলবে। এবং ভালো খবর দেবে বলেই সে সুন্দর ভাবে সেজে এসেছে, আমার পছন্দের খাবার অর্ডার করেছে। সে আমাকে বলল- “এসো আমরা খেয়ে নেই, ক্ষুধা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা ঠিক না।” আমি হেসে সায় দিলাম। দুপুরের লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে, আমার নিজেরো ক্ষুধা লেগেছে বেশ। তাছাড়া পছন্দের সব খাবার সামনে রেখে আলাপ সালাপ করার চেয়ে খেয়ে নিয়ে কথা বলাটা ভালো। আমি বেশ দ্রুত খাচ্ছি দেখে সে বলল-” তুমি এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন? সময় নিয়ে আস্তে ধীরে খাও।” আমি তার কথায় বেশ লজ্জা পেলাম। খাবার গতি কিছুটা কমল। তবে দ্রুতই খাওয়া শেষ হয়ে গেলো। খাওয়া শেষ হতে হতেই ধোয়া ওঠা এক কাপ ক্যাপাচিলো কফি দিয়ে গেলো ওয়েটার সাথে বিল। আমি ওয়ালেট বের করলাম, তা দেখে অরিত্রি বলল- “উ হু আজকে আমি বিল দেবো। ” তার কথার মাঝে ডমিনেটিং এমন কিছু ছিলো যে আমি ওয়ালেট ঢুকিয়ে দিলাম। সে বিল পে করে দিলো। আমরা মন দিয়ে কফি খাচ্ছি। মাঝে মাঝে অরিত্রির কাছ থেকে তার দেয়া পারফিউম এর খুব সুন্দর গন্ধ আসছে। আমরা কফি শেষ করলাম। এরপর কয়েকটা মুহুর্ত নীরব বসে থাকলাম। অরিত্রি কথা শুরু করলো- শোন তোমাকে আজকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবার জন্য ডেকেছি। জানিনা তুমি কথা গুলো কিভাবে নেবে, কিন্ত কথাটা না বলে থাকা যাবেনা।
আমি- কীভাবে আর নেবো। তুমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে তাইতো। এটা অন্য ভাবে নেবার কিছু তো নেই। আর কয়েকটা দিন সময় পেলে ভালো হতো। একটু স্ট্যাবল হতে পারতাম। তবে তুমি যেহেতু চাচ্ছো সে ক্ষেত্রে এখন বিয়েতেও আমার আপত্তি নেই।
অরিত্রি- একটু ভুল হচ্ছে তোমার। আমি বিয়ের ব্যাপারেই বলবো কিন্ত সেটা আমাদের নয়। শুধু আমার বিয়ের ব্যাপারে। তোমার বুঝতে ভুল হয়েছে।
আমি- মানে কি? তোমার মাথা ঠিক আছে? কি বলতে চাচ্ছ বুঝে বলছো তো?
অরিত্রি- আমি বুঝেই বলছি। গত তিন দিন আগে আমাকে দেখতে হঠাত করেই ছেলে পক্ষ এসেছিলো। তোমাকে জানাবো সেই সুযোগটাও পাইনি। অফিস শেষ করে গিয়ে দেখি এই অবস্থা। আমি না করে দিতে পারতাম। কিন্ত একেবারে ইলেভেন্থ আওয়ারে সিন ক্রিয়েট করতে ইচ্ছে করলো না। আর আমি ভেবছিলাম যে জাস্ট দেখতেই তো আসছে দেখে চলে যাবে। পরে এই ব্যাপারটা কাটানো যাবে। একটা মেয়ে কে তো অনেক ছেলেই দেখতে আসে বিয়ের জন্য। কিন্ত দিন শেষে বিয়ে তো এক জনের সাথেই হয়।
আমি- তো দেখতে এসে কি আংটি পড়িয়ে গেছে। অরিত্রি এনগেজমেন্ট এমন কোন কঠিন টার্ম না। এই দেশে ভুড়ি ভুড়ি এনগেজমেন্ট হয় আবার ভেংগেও যায়। তুমিও ভেংগে দিবা।
অরিত্রি- ব্যাপারটা তেমন হলে ভালোই হতো। কিন্ত তাদের আমাকে এতই পছন্দ হলো যে সেদিনই কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দিলো। ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে গেছে আমি ঠিক না করতে পারিনি।
আমি- তুমি এটা কি বলছো। লাস্ট দুই বছরে এতো কমিটমেন্ট, এতো স্বপ্ন, এতো ভালোবাসার গল্প, সব গুলা তুমি একটা সন্ধ্যা বেলায় নষ্ট করে দিছো। এটা তুমি কিভাবে করলা, তোমার জন্য আমি শেষ দুই বছর কত কষ্ট করে চলেছি, তোমার আমার জন্য একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি, কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি পর্যন্ত। বাড়ি থেকে বিয়ের প্রোপোজাল গুলা সব ক্যানসেল করেছি। আর তুমি কে দেখতে এসেছে তার জন্য একবারে গলে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছো। আর এই গল্প করার জন্য তুমি আমাকে আজকে ভর দুপুর বেলা ডেকেছো, আমার পছন্দের খাবার খাইয়ে তুমি এই গল্প শোনাতে এসেছো যে, হঠাৎ করেই হয়ে গেছে, তুমি বাধা দিতে পারো নায়। এর চেয়ে তুমি আমাকে বলতা আমি তোমার সামনেই বিষ খাইতাম, কষ্ট করে তোমাকে এতো গুলা টাকা বিল দিতে হতনা।
অরিত্রি- দেখো তুমি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। এমন ভাবে সব হয়ে গেলো যে আমার কিছুই করার ছিলো না।
আমি- এই সব ঢংয়ের আলাপ করো না আর। কোন ভাবেই কি এই বিয়ে টা ক্যানসেল করা যায়না।
অরিত্রি- না তা সম্ভব না। আর ছেলেটাও খারাপ না। আমি চাইলেও আমার ফ্যামিলি মেনে নেবে না। ছেলেটাও বেশ আবেগী আছে। সেও মেনে নিতে পারবে না। হুট করে সেও একটা অকারেন্স করে ফেলতে পারে।
আমি- বাহ অরিত্রি বাহ, খুব পতি ভক্ত হয়ে গেছো তিন দিনেই, ছেলেটা কিছু একটা করে ফেলবে, তিন দিনেই ছেলেটার প্রতি তোমার মায়া চলে এসেছে। আর আমি তোমার জন্য দুই বছর ধরে বসে আছি, সেটা তোমার মনেই নেই, আমিও যে কিছু একটা করে ফেলতে পারি সেটা তোমার মনে হচ্ছে না।
অরিত্রি- তুমি সে রকম আবেগী না। তুমি তো আজীবন আমাকে সুখী দেখতেই চেয়েছো। মনে কর আমি এই ছেলের সাথেই সুখি হলাম। তোমার সাথে আজকেই আমার শেষ দেখা। ভালো থাকবা।
এটা বলেই অরিত্রি বেড়িয়ে গেলো। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই মেয়ে কি বলে গেলো। সব কি সত্যি বলল না বানিয়ে বলল। বানিয়ে বলার মেয়েতো সে না। আমি কিছুক্ষন ঝিম ধরে বসে থাকলাম। আমার কান্না আসছে। রেস্টুরেন্টের মত জনাকীর্ণ জায়গায় কান্না করা যায়না বলে অনেক কষ্টে চোখের পানি ধরে রেখেছি। একটু পরে আমি বের হলাম। বের হয়ে আমার মনে হলো অরিত্রি আমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমি তাকে ফোন দিলাম ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।। তার অন্য একটা নাম্বারে ফোন দিলাম সেটাও বন্ধ। অরিত্রির একটা কাজিন আছে যে আমাদের ব্যাপার টা জানে আমি তাকে ফোন দিলাম, সে রিসিভ করে বলল – ভাইয়া “অরিত্রির বিয়ে হয়ে গেছে হঠাত করে। আপনি প্লিজ ওকে ভুলে যান। “
আমি এবার শিউর হলাম যে অরিত্রি আমার সাথে মিথ্যে বলেনি। আমার পায়ের তলার মাটি এক মুহূর্তে সরে গেলো মনে হতে লাগলো। আমার মাথাটা ফাকা ফাকা লাগছে। বুকের মাঝে চাপ ব্যাথা। আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। আমি হাটা শুরু করলাম। পুলিশ প্লাজাতে আমার বাইক আছে এটা আমার মনেই নাই। এলোমেলো ভাবে হাটলাম কিছুক্ষন। এর পর পুলিশ প্লাজার ব্রীজ টা পার হয়ে হাতির ঝিলের বসবার মত একটা জায়গা আছে সেখানে গিয়ে বসলাম। তীব্র রোদ বলেই জায়গাটায় কেউ নেই। আমি একা বসে আছি। কড়া রোদ আমার উপর কোন প্রভাব ফেলছে না। আমার মনে হচ্ছে আমি মারা যাই। অরিত্রি কে ছাড়া বাকি জীবন কিভাবে কাটাবো আমি। হয়তো একটা সময় বিয়ে হবে কিন্ত মনের মাঝে অরিত্রি থেকেই যাবে, শীর্ষেন্দুর উপন্যাস “দ্বিচারিণী ” এর মত হবে আমার। থাকবো একজনের সাথে মন থাকবে আর একজনের কাছে। জগত এমন কেন? অরিত্রি এমন কেন, আমাকে ছেড়ে কেন গেলো ও?। আবেগী সব চিন্তা, মাথায় ভর করলো, চোখ দিয়ে অবিরত ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে। কেউ যেন এই জল না দেখে এই জন্যই বুঝি আকাশ হঠাৎ করেই মেঘে ঢেকে গেলো। অল্পক্ষনেই বৃষ্টি নামবে এমনটা বুঝা যাচ্ছে। বিধাতা হয়তোবা চাচ্ছে না আমার নয়ন জল কেউ দেখুক। এক ফোটা দুই ফোটা করে বৃষ্টি শুরু হল, আশে পাশে কেউ আমার মত বসে নেই, রাস্তার মানুষ নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে চাচ্ছে, জোর বৃষ্টি হবে এমনটা বুঝা যাচ্ছে। আমারই কোন বীকার নেই৷ বৃষ্টীর জল আমার কি বা আর ক্ষতি করবে। অরিত্রি ই নেই আমার আর ক্ষতিই কি হবে। জোরে মেঘ ডাকলো। ঠিক এই সময় আমার ফোনে একটা টেক্সট এলো। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন বের করে দেখলাম অরিত্রির টেক্সট। সে লিখেছে- এই ছেলে তুমি এতো বোকা কেন? তোমার সাথে সারাটা জীবন যেই মেয়ে কাটাতে চেয়েছে সেই মেয়ে তোমাকে এতো সহছে ছেড়ে দিয়ে অন্য আর একজন কে বিয়ে করে ফেলবে?। পিছনে তাকাও আমি তোমার পিছনে একটু দূরে বসে আছি। এক কাজ করো দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলো- ভালোবাসি।”
আমি ভাবলাম অরিত্রি আমার সাথে মজা করছে আরো বেশি কষ্ট দেবার জন্য। তবুও আমি ঘুরে পিছে তাকালাম, এবং সত্যিই অরিত্রি বসে আছে৷ আমি দৌড়ে গেলাম, জড়িয়ে তাকে ধরতে পারলাম না। আমার মাঝে সংকোচ কাজ করলো৷ তার হাত ধরে আমি শুধু বললাম- “অরিত্রি আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। ” অরিত্রি বলল- যে ছেলে একা একা চোখের পানি ফেলছে বৃষ্টিতে ভিজে, সেই ছেলেকে অরিত্রি তার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। আমি শুধু তোমাকে একটু টেস্ট করেছি। সরি এটার জন্য। তুমি যদি বাইক বের করে চলে যেতে তাহলে তোমার এই আবেগটা আমি দেখতেই পেতাম না। আমার প্লানিং এ এই একটা উইক পয়েন্টই ছিলো৷ আমি রেস্টুরেন্ট থেকে আগে বের হয়ে একটা জায়গায় দাড়িয়ে ছিলাম এটা দেখার জন্য যে তুমি কি কর। আমার কাজিন কেউ বলা ছিলো। ও যেন বলে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি বাইক না নিয়ে এসে হেটে হেটে এখানে বসে আছো। আমি তোমার সামনে দিয়ে রাস্তার ওপার দিয়ে একবার গিয়েছি তোমাকে দেখাবার জন্য, আসলেই তুমি কাদছো কিনা।। তুমি অনেক ভালো ছেলে, তোমাকে আমি সারা জীবনের জন্য চাই।
আমি – অরিত্রি এই টেস্ট টা তুমি না করলেও পারতে। আচ্ছা চল আজকে আমাদের প্রথম দেখা হবার প্লেসটায় যাই।
ঠিক এই সময় মুষুল ধারে বৃষ্টি নামলো। আমরা অল্পক্ষনেই ভিজে গেলাম। অরিত্রি বলল- আসো আজকে বৃষ্টিতে ভিজি দুজনে।
আমি- আচ্ছা ভিজিবো, আমি বাইক টা নিয়ে আসি।
অরিত্রি- না বাইক আনার দরকার নেই। আমি তোমার হাত ধরে হাটবো। হেটে হেটে পুরো হাতিরঝিল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘুরবো।
আমি- আচ্ছা চলো।
আমি আর সে দুই জন দুজনের হাত শক্ত করে ধরে রাখি। বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে মেঘ্ গর্জন করে। তখন অরিত্রি আমার হাত আরাও শক্ত করে ধরে, আমার শরিরের সাথে লেপ্টে যায়। আমি অরিত্রি কে বলি “চশমাটা খুলে ফেলো, তোমার সুন্দর চোখ দুটো আমি দেখি”। অরিত্রি তার সমগ্র জগত অন্ধকারে দিয়ে চশমা খুলে ফেলে। সে প্রবল বিশ্বাস নিয়ে আমার হাত ধরে হাটে। আমি তার চোখের দিকে তাকাই, তার মায়া ভরা চোখ আমাকে আদ্র করে দেয়। আমি পরম করুনাময় এর কাছে প্রার্থনা করি, অরিত্রির হাত যেন আমার কোন দিন ছেড়ে দিতে না হয়।