Blog

হুট করে দুপুর বেলার ভাত ঘুম ভেংগে গেলে কারোই ভালো লাগার কথা না। আমার নিজের কাছেও খুব খারাপ লাগছে। সব দুপুরে ভাত সাটানোর পরে ঘুমানো হয়না। মাঝে মাঝে হয়। সেই মাঝে মাঝেও যখন ঘুম টা নষ্ট হয় তখন মেজাজ খিচিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আজকে ঘুমটা ভাংলো মাইকের শব্দে। দুপুর, বিকেলের মাঝামাঝি সময়ে মাইকের তীব্র শব্দ কানে আসার কথা না। তবুও সেই শব্দে ঘুম ছুটে গেলো। হঠাত ছোটা ঘুম থেকে স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগলো। মাইকে তীব্র শব্দে হামদ নাত বাজছে। আশে পাশেই কোথাও ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে। মুল অনুষ্টান সন্ধ্যার পরে, এখন হামদ নাত বাজিয়ে ড্রেস রিহার্সাল চলছে। আমি হঠাৎ ঘুম ছেড়ে উঠে এদের কার্যক্রম বুঝার ট্রাই করছি। ওয়াজ মাহফিল মাঝরাত অব্দি হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এর মানে রাতেও ঘুম হবে অনেক লেট করে। হামদ নাত বন্ধ করে মাইকে ঘোষণা এলো। মূল বক্তার আসতে দেরী হবে। তিনি পথের জ্যামে আটকে গেছেন। মূল পর্ব তাই শুরু হতে ন’টা বাজবে। সবাই যেনো নিজ নিজ আসনে থাকেন, কেউ যেনো বাড়ি ফিরে না যান সেই অনুরোধও করা হলো। এরপর আবার শুরু হলো হামদ নাত আর গজল। তারা বলল বাড়ি ফিরে না যেতে, এদিকে মাইকের তীব্র শব্দে আমার বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে গেলো। আমি নাস্তিক ধরনের মানুষ না তবুও কেনো যেন তীব্র শব্দের দীর্ঘ সময়ের এই সব ওয়াজ মাহফিল আমার ভালো লাগে না। অল্প শব্দ করে স্বল্প সময়ে ইফেক্টিভ ধর্মীয় আলোচনা করা মুফতি মাওলানা দের জন্য খুব কঠিন কিছু না। কিন্ত কোন এক বিচিত্র কারনে তারা অল্প কথাতে, স্বল্প সময়ে মাহফিল শেষ করেন না। তাদের কে দোষ দিয়ে লাভ নেই যারা এই সবের আয়োজন করেন সিংহভাগ দায় তাদের। মূল বক্তব্য শেষ হবার পরেও দীর্ঘ সময় নিয়ে, মসজিদের উন্নয়ন এবং মাহফিলের খরচ তোলার পর্ব শুরু হয়। এই পর্ব মোস্ট ডেঞ্জারাস। জোর জবস্তি করে টাকা উঠানোর কায়দা তাদের খুব ভালো জানা আছে। এরা এমন ভাবে কথা বলে শুনলে মনে হবে আজকে কিছু টাকা দিলে জান্নাতে যাবার টিকিট আজকে এই মুহূর্তেই নিশ্চিত হয়ে যায়। আমার নিজের মতে এতো জোর জবস্তি, ভিক্ষা করে মসজিদ এর উন্নয়নের কোনো দরকারই নেই। টাইলস লাগাতে হবে, এসি লাগাতে হবে, ব্যাক আপ জেনারেটর লাগবে, কি দরকার বাপু এই সবের। এর চেয়ে যতটা আছে সেটাতেই নামায পড়ে ফেলো। কেউ ইচ্ছে করে টাকা দিলে কাজ হবে, না হলে নরমাল ভাবে নামায পড়তে হবে। এমন তো না যে টাইলস এর মসজিদে নামায পড়লে বেশি সওয়াব আর বাশ, চাটাই টিনে ঘেরা মসজিদে পড়লে কম। ব্যাপার তেমন না। আমি যতটুকু জানি তিনটে স্পেশাল মসজিদ আছে তিনটেই মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে নামায পড়লে বেশি সওয়াব হয়। বংগদেশে তাই টাকা তোলা টা একটা বাজে ট্রেন্ড হয়ে গেছে। আমি মাইকের তীব্র শব্দে গজল, হামদ নাত শুনছি, আর মাথায় এই সব চিন্তা আসছে। এবার নতুন খেলা শুরু হলো। এতোক্ষণ তো রেকর্ডেড জিনিস বাজানো হচ্ছিলো এবার শুরু হলো আসল প্রতিভা দেখানো। এলাকার গন্য মান্য মানুষের নিজ কন্ঠের লাইভ গজল স্টার্ট হলো। এক এক করে সব মানুষকে ডাক দেয়া হচ্ছে যারা এসে গজল গাইছে, নাতে রাসুল শুনাচ্ছে। এদের হেড়ে গলায় এই সব শোনা প্রচন্ড পেইন দিচ্ছে। বেশ অনেকক্ষন ধরে বিছানায় মটকা মেরে শুয়ে থেকে এই সব শুনলাম৷ এরপর গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম। খিদে লেগে গেছে। মাহফিলের মাঠে তেলে ভাজা সহ ভ্যারাইটিজ স্বাদু খাবারের দোকান বসে, সেখানে গিয়ে ইচ্ছা মত তেলে ভাজা সাটানো দরকার। ওয়াজ মাহফিল এর এই একটাই ভালো দিক। স্বাদু দব্যাদি খাওয়া যায়। আমি রেডি হয়ে সুখাদ্য ভক্ষণ এর জন্য বের হলাম। মাহফিল হচ্ছে বেশ বড় মাঠে। সেই মাঠের একদিকে মেলা বসেছে যেনো। খেলনা, বই, আতর, টুপি, গেঞ্জী সব কিছুর দোকান বসে গেছে। তার পাশেই তেলেভাজা খাবারের দোকান৷ তার এক পাশে চাটাই দিয়ে বানানো বাথরুম। বেশ বড় করে জলাধার বানানো ওযুর জন্য। প্রচুর মানুষের ভীড় সেই ভীড়ের মাঝে কিছু লোক ছোট বাথরুম সেরে প্যান্ট, পাজামার চেন খুলে হাত ঢুকিয়ে রেখেছে। কুলুখ করছে। ব্যাপারটা এতোটাই কদর্য যে সেটা বর্ননা করতেও কেমন যেনো লাগছে। ইসলাম খুব সুন্দর একটা ব্যাবস্থা। এই ধর্মে কদর্যতার কোনো স্থান নেই। জগতের আর কোন দেশের মুসলিম জনাকীর্ণ স্থানে প্যান্ট পাজামার চেন খুলে হাত ভরে ঘোরে বলে আমার জানা নেই। তারা অতিরিক্ত ইসলামই নিয়ম দেখাতে গিয়ে কদর্যতার চূড়ান্ত রুপ প্রদর্শন করে ফেলছেন এটা তাদের মাথায়ও নেই৷ আমি সরে এলাম সেখান থেকে। বেশি দূর অবশ্য আসা গেলো না। কারন খাবার আর এই চাটাই এর বাথরুম কাছাকাছি। আমি জিলিপি নিলাম এক প্লেট সাথে পিয়াজু। চেয়ারে বসে খাচ্ছি। প্রতি কামড়ে মনে হচ্ছে অমৃত মুখে দিচ্ছি। এমন সময় মুরুব্বি গোছের একজন কে দেখলাম পাজামার চেনের মাঝে হাত ঢুকিয়ে এদিকেই আসছেন। খাবার সময় এই ধরনের কিছু দেখলে খাবারের রুচি চলে যায়। তিনি প্রায় আমার কাছাকাছি এসে গেছেন। এসে হাত বের করে ট্যিসু পেপার টা ফেলে দিলেন। ব্যাপারটা যে কতটা নোংরামি এটা উনার ধারণাতেই নেই। উনি হাত ধুতে হবে এই বিষয়টাও ভুলে গেছেন। অথবা হাত যে ধুতে হয় এটা উনি মনেই করেন না। এই হাতেই তিনি জিলিপি নিলেন প্লেটে এবং এসে আমার পাশেই বসলেন। আমার গা গুলাতে লাগলো। জিলিপি গলা দিয়ে নামছে না। উনি বেশ আয়েশ করে জিলিপি মুখে ভরছেন। খানিকটা সময় খেয়ে উনার চোখ পড়লো আমার দিকে৷ আমাকে উনি জিজ্ঞেস করলেন- কি অবস্থা, মাহফিল শুনতে আসছ?

আমি- না, মাহফিল শুনতে আসি নাই। আমার বাসা থেকেই মাহফিলের মাইক এর শব্দ শোনা যায়। আমি খেতে এসেছি।

উনি- নাস্তিকের মতো কথা বার্তা কেনো বলছো? ওয়াজ মাহফিল হলো সোয়াব কামাবার জায়গা। কম বয়সে এই সব দিকে মন দিলে আরো বেশি সওয়াব। তোমরা প্যান্ট সার্ট পড়া পোলাপান, তোমাদের সব আগ্রহ নাচ গানের দিকে। দ্বীনের রাস্তায় আসো বুঝেছো। যুবক বয়সের ইবাদত হলো আসল ইবাদত। নামায পড়েছো?

আমি- না, বাসায় গিয়ে পড়বো।

উনি- কেনো মসজিদে নামায পড়তে কি সমস্যা। নামায মসজিদে পড়লে সাতাশ গুন বেশি নেকি হয়।

আমি- জানি এটা। ধর্ম পালন তো নিজের উপরে, আমি কোথায় কিভাবে সেটা করবো এটা নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও হবে। আমি কারো ক্ষতি করছি কিনা এটাই মেইন ব্যাপার।

উনি- তুমি তো বেয়াদপ নাস্তিকের মতো কথা বলছ। তোমার মতো পোলাপানের জন্য দেশে বেলাল্লাপনা বেড়েছে৷

আমি উনার কথার জবাব দিলাম না। আপন মনে জিলিপিতে কামড় দিলাম। উনার হয়তো আরো অনেক কিছু বলার ছিলো আমি রেসপন্স করছি না দেখে উপযাচক হয়ে বলতে পারছেন না। নীরবে দুজনে খেয়ে যাচ্ছি৷ এমন সময় তার ফোনে কল এলো, তিনি রিসিভ করে স্লামালিকুম বললেন। শুদ্ধ ভাবে সালাম না দিতে পারা এই বুড়া আমাকে ইসলামের ছবক দিচ্ছেন। এরপরের কথোপকথন আমি মন দিয়ে শনলাম। উনি বলছেন -” শোনেন ভাই আমার এক কথা, বারো পার্সেন্ট এর এক পাই কম হলেও টাকা আমি দেবো না। এলাকাই খোজ নিয়ে দেখেন এর চেয়ে কম সুদে কেউ টাকা ধার দেয় না । পুব পাড়ার মফিজের রেট পনেরো টাকা। আপনি হাফিজুলের পরিচিত তাই আপনার জন্য আমি রেট কমায়ে বারো টাকা ধরছি এর কম যদি চান তাহলে টাকা অন্য জায়গা থেকে নেন। আমি বারো টাকা সুদের এক পাই কম নেবো না। “

আমি বুঝে গেলাম মুরুব্বি ঠিক কোন ধরনের হাজী সাহেব। সুদ, ঘুষ, অবৈধ টাকার মানুষই এই দেশে এখন বড় বড় সুফী সাধক হয়ে গেছে। এই সব সুফী সাধকেরাই এই দেশের ইসলামের বড় খেদমতগার। যিনি যত বড় ভন্ড বাটপার তিনি তত বড় খেদমতগার। আমার প্লেটের জিলিপি পেয়াজু শেষ। আরো খেতে ইচ্ছে করছে। তবে পাশে ইসলামের এই ধরনের জবরদাস্ত খেদমতগার এর পাশে বসে খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি উঠে পড়লাম। উনি আড় চোখে আমাকে দেখলেন। তার চোখে আমার প্রতি প্রছন্ন ঘৃনা। আমার মনে তার জন্য প্রছন্ন ঘৃনা। সমান সমান আর কি। আমি চলে এলাম সেখান থেকে। পরম করুনাময় এর মংগলময়তা এই সব খেদমতগার দের উপর পতিত হোক, উনারা ধর্মের সুন্দর স্পর্শে নিজেদের কদর্যতা ধুয়ে ফেলুক। আমিন

অন্ধকার শূন্যতায়

পৃথিবীর সমস্ত আধারেরা এক হয়, গড়ে তোলে রুদ্ধদ্বার বলয়

সেই আধারের গভীরতম গহীনে হারিয়ে যেতে যেতে অদৃষ্ট কে মেনে নিতে হয়।

সমগ্র সত্ত্বা জুড়ে অবিরাম ক্রিয়া করে চলে সব ভীত, সন্ত্রস্ত অনুভূতির দল

জগতের সকল মায়াঘেরা বস্তুতে কে যেন আঘাত করে চলে, সব শুদ্ধতা ভেঙে দেয় বারুদ মাখা বন্দুকের নল।

দিগন্ত জুড়ে এই ভাঙার খেলা, আখি পল্লবের সমগ্রটা গ্রাস করে নেই দুর্বিষহ এক ছবি

সকল মাদকতা উড়ে যায়, হারিয়ে যায় নেশারা, আপনারে হারিয়ে ফেলে আধারেতেই ডুবি।

কাল কেটে যায়, কেটে যায় শত আলোকবর্ষ, সময় থেমে যায়, আবার শুরু হয়, আবার জমে উঠলো আলো

চিরটাকাল যে হারিয়ে ফেলেছে নিজের সত্তাকে যে যেন আবার জীবীত হয়ে অভ্যাসের বসে আবার মরতেই বসলো।

আধারেরা কখনো ঘিরে ধরে চলে, আবার ছেড়ে যায়,

আলো আধারের ক্যনাভাসের জীবন ছবিতে প্রান নায়, প্রান নায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *