এই পৃথিবীতে সব চেয়ে সুখি মানুষ কারা জানেন? আমার মতে তারা, যারা যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে ইচ্ছামাফিক ঘুমিয়ে পড়তে পারে। হোক তা দিন, হোক তা মধ্য দুপুর অথবা বিকেল বা রাত। যখন যে কোন সময়। ঘুমের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি টাও ম্যাটার করে। সবাই কিন্ত সব পরিস্থিতি তে ঘুমাতে পারেনা। যেমন আপনি অফিসে, বা বাসে করে অল্প দুরুত্বের কোথাও যাচ্ছেন, এর মাঝে একটু ঘুমের আবেশ আসল আপনি ঘুমিয়ে নিলেন পাচ বা দশ মিনিট। আমার মতে যাদের এই আসাধারণ দক্ষতাটা আছে তারায় সব চেয়ে সুখি। আমি যাদের সাথে মিশি যাদের সাথে আমার হর রোজ কথা হয়, এক সাথে চলা হয় তাদের অনেকের মাঝেই এই দক্ষতা আছে। আমি তাদের এই ব্যাপারে রীতিমত হিংসা করি। আমার এমন কিছু বন্ধু আছে যারা চাইলে পাচ দশ মিনিটের জন্য চায়ের দোকানেও বেঞ্চিতে বসে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে নিতে পারে, অফিসেও কয়েকজন কে দেখি কাজের প্রেশার নেই চেয়ারেই বসে থেকে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে। হয়ত তারা এই অল্প কয়েক মূহুর্তেই স্বপ্নও দেখে ফেলে। এদের প্রতি আমার সত্যিকার অর্থেই হিংসা হয়। অল্প ক্ষনেই দুনিয়া ভুলে দিবা নিদ্রা এরা কিভাবে দেয় তা উপরওয়ালাই জানেন। আমার তো অল্পক্ষন কেন বেশিক্ষন সময় এও ঘুম আসেনা। অনেক চেষ্টা করেও আসেনা। ধরেন হাতে এক বা দুই ঘন্টা আছে এর পরে প্রচুর কাজের চাপ শুরু হবে। অন্যরা করবে কি সুন্দর মত করে একটা ঘুম দিবে। আমিও চেষ্টা করব কিন্তু হবেনা। বিচিত্র এক বাজে স্বভাব হয়ে গেছে নিজের চেনা বিছানা, চেনা বালিশ, চেনা এনভায়রনমেন্ট না হলে ঘুম আসেনা। একটু শব্দ, খানিকটা আলো থাকলেও আমার ঘুম হয়না। এমন একটা বাজে ব্যাধি কিভাবে বাধালাম তা নিজেও জানিনা, ডাক্তার বদ্যি দেখিয়েও লাভ হয়নি। রিভট্রিল, অ্যাডিলাক্স, ডিসফেন এই গুলা কার্যত আমার উপর কোন প্রভাবই ফেলে না। শুরুটা কিভাবে হয়েছে সেটা আমি পুরোটা না জানলেও খানিকটা জানি। অল্প বয়সি আবেগী একটা ব্যাপার ছিল। আবেগটা এখনও আছে তবে তা নিয়ন্ত্রণ টাও আমি শিখে গেছি। সব ঠিক আছে মাঝখান দিয়ে ইনসমনিয়া টা ধরে গেল। ডাক্তার এর পরামর্শ মেনে আমি চা কফি বাদ দিয়েছি, রাত জেগে বই পড়া কমিয়েছি কোন কিছুতেই তেমন ফল হয়নি। অগত্যা পুরনো লাইফ এই ব্যাক করেছি। বয়স বাড়ছে, বুদ্ধিটা অতটা পাকাপোক্ত না হলেও, অনেক কিছুর উপর কনট্রোল আসছে, আবেগ অনুভুতি গুলো চাইলে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বেকার থেকে সকার হলাম, আগে কিছু না করেই দিন পার করতাম এখন করার মত, অ্যাটলিস্ট টাইম পাস করার মত অনেক কিছু আছে। ডাক্তার বলেছিল তোমার কোন পরিশ্রম নায় তায় তনুমনে ক্লান্তি আসেনা এই জন্য ঘুম হয়না। সেই সময় টা একটু বদলেছে। এখন মাঝে মাঝে ব্যাপক খাটা খাটনি যায় তারপরো ঘুম ধরেনা। আসলে এটা শুধু শারিরিক পর্যায়ে নেই, মমনস্তাত্ত্বিক পর্যায়ে চলে গেছে। আমি জানি কি করলে অন্তত রাতে ঘুমান যায়। তাই আমার ঘরের আলো সব সময় নিভানো থাকে, পুরোপুরি কবরের অন্ধকার যাকে বলে, জানালা বন্ধ রাখি যাতে বাইরে থেকে শব্দ কম আসে। দরজার লক বাসায় থাকলে খোলা থাকে যাতে কেউ চাইলে আমার ঘরের কাজ শেষ করে যেতে পারে আমাকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে না ডেকে। এতো গেল নিজের পরিবারের বাড়ির কাহিনি। চাকরীর কারনে আমি যে খানে থাকি সে জায়গাটা এত নীরব না। দিনের বেলাটাতো কখনই নীরব থাকেনা। আসেপাশের বাড়ির আন্ডা বাচ্চারা ক্যাউ ম্যাউ লাগায়েই রাখে, পাশে সারাদিন ই কোন না কোন বাড়ির ঘটা ঘট মেইন্টেনেন্স এর কাজ চলে। ঘুমাতে হলে রাত টাই ভরসা। রাত বারোটা থেকে সকাল আটটা এই সময়টা হল ঘুমের জন্য মোটামুটি ঠান্ডা সময়। এই টাইমটাতেই ঘুমানর চেষ্টা করি। কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই সময়টাও কিভাবে যেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি নিচ তলায় থাকি। স্বাভাবিক ভাবেই নিচতলা তে বিড়াল ছূচো ইদুরের উপদ্রব একটু বেশি থাকে। কিন্তু গত ক দিনে এদের উপদ্রব মাত্রা ছাড়িয়েছে। এর সাথে পাশের বিল্ডিং এর মালিক এর নতুন মোরগ পোষার বাতিক, রাতভর জীন ভূত দেখে কুকুরের ঘেউ ঘেও তো আছেই। কিভাবে যে ঘুমাই আমিই জানি। লাস্ট তিন দিন তো একেবারেই নিদ্রাহীন। এক জোড়া বিড়াল খুব ত্যাক্ত বিরক্ত করে। মাঝ রাত থেকে তাদের ক্যাউ ম্যাউ ম্যাউ শুরু হয়। শয়তান দুইটা আমার দরজার সামনেই এই গুলা বেশি করে। কটা দিন এদের জন্য ঘুম হয়না। মাঝরাতে ভুতের ভয় করে আমার তাই দরজা খুলে তাদের তাড়াতে পারিনা। তবে ভোরবেলা এই ম্যাউ ম্যাও সংগীত সহ্য করা কঠিন। ভোরবেলায় তাদের ক্যাও ম্যাও ঝগড়া তে ঘুম ছুটে গেল। রাগে ফুসতে ফুঁসতে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। ইচ্ছা বিড়াল দুটোকে পাইলে লাথি দিয়ে কোমড় ভেংগে দেব। খুব সন্তপনে দরজা খুললাম যাতে বিড়াল দুটো টের না পায়। পেলোওনা। তারা নিজেদের ভিতর ঝগড়া নিয়ে ব্যাস্ত। বিড়াল দুটো কে দেখে অবাক হলাম। এ যে অসম রিলেশনশিপ। ছেলে বেড়ালটা মেয়েটার থেকে সাইজ এ ছোট। তবে ছেলে বেড়ালটা মে বি বাংলা কাটপিছ সিনেমার ভক্ত, ভক্ত না হলে নিজের চেয়ে মোটা গাবদা বেড়াল এর সাথে সর্ম্পকে কিভাবে জড়ায়। আর মেয়ে বিড়াল টাও বলিহারি। পেট ঝুলে গেছে কাটপিছ বাংলা ছবির নায়িকাদের মত। পেটে বাচ্চা নিয়ে হাটুর সাইজ ছেলে বিড়াল এর সাথে ফষ্টিনষ্টি করছে। আমি শিউর সিজার করলে এই হারামজাদী বেড়ালের পেট থেকে কম করে পনেরটা বাচ্চা বেড়োবে। এতটাই পেট মোটা। অসম রিলেশনশিপ বলেই বোধ করি তাদের মাঝে প্রেম থেকে ঝগড়া বেশি। আমি যে তাদের লক্ষ করছি এটা তাদের ভ্রুক্ষেপ হচ্ছেনা। অসময়ে ঘুম ভাংগায় মেজাজ খারাপ ছিল। তাই হাতের কাছে মারার মত কিছু না পেয়ে পায়ের স্যান্ডাল ছুড়ে মারলাম। বলায় বাহুল্য লাগল না। তবে তারা একটু দূরে চলে গেল। আমি ঘরে ঢুকলাম, ঘরে হোমপ্যাথির বড় কাচের শিশি ছিল। সব কয়েকটা নিলাম। নচ্ছাড় দুটোকে ছুড়ে মারব এইই নিয়ত। দরজা খুলে বাইরে এসেছি, তাও তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। নিজেদের ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দিকে সাথে সাথে শিশি ছুড়লাম একটা। লাগলনা। এক এক করে সব কয়টা ছুড়ে দিলাম। একটাও লাগলনা। দীর্ঘদিন ক্রিকেট না খেলে, থ্রোয়িং না করে হাতের টিপ নষ্ট হয়ে গেছে। হাতে আর কোন শিশি নেই। মিছি মিছি শিশি ছুড়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলাম। হারামজাদা দুটো ভয় তো পেলই না নিজেদের মত ম্যাউ ম্যাউ করতে লাগল। ওরাও বুঝে গেছে আমার কাছে আর কোন শিশি নেই। এটাও বুঝে গেছে আমার হাতের টিপ রোমান সানা ফেল, যাহাই মারিব তাহাদের শরীর স্পর্শ করিবেনা। এর মাঝেই পাশের বাড়িওয়ালা এর মোরগ কুক্কু রু কু ডেকে উঠল। এই আর এক হারামজাদা শুয়ার। তোর ঘরে নাই একটাও মুরগী, তুই মোরগ পুষোশ কোন আল্লাদে। এই মোরগটার গলায় পাওয়ার ও আছে। আওয়ামীলীগ এর সমাবেশ এর কল রেডী মাইক ফেল। এই শয়তানের জন্য সকালের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। রোজ সকালে কুক্কু রু কু, আমার মত নৈশব্দ পছন্দকারীর ভাল লাগবার কথা না। খুব ইচ্ছে করে ভাল একটা সার্জন দিয়ে সার্জারি করিয়ে মোরগটার ভোকাল কড আউট করে দিতে। হাসবেন না কেউ, আমাকে পাগল ও ভাব্বেন না। ইউরোপে প্রতিবেশীরর মোরগ এর ডাকে অতিষ্ট হয়ে কোর্টে কেস করার নজির ও আছে। সে বেচারারও আমার মতই দশা ছিল। মোরগ এর ডাকে তার ঘুম নষ্ট হত। অবশ্য কেস করে ফায়দা হয়নি, সে হেরেছিল। আসলে ন্যয় বিচার যে পৃথিবীর কোন দেশেই পাওয়া যায়না এটা তার প্রমাণ। নিউজটা প্রথম আলো পেপারে পড়েছিলাম। এত গেল বিড়াল, মোরগ এর কথা, কুকুর বাদ থাকে কেন, এই জানোয়ার গুলাও কোন কারন ছাড়া তার স্বরে চেচায়। আর এক একটার চেহারা বাঘ এর মত, দেশি ডাল কুত্তা কিভাবে এই রুপ দেহ করেছে তা গবেষনার ব্যাপার। যে ধরনের বডি এদের তাতে ভুত জীন রাক্ষস খোক্ষস কোন কিছুতেই ভয় পাবার কথা না। যারে পছন্দ করবি না গিয়ে লাফ দিয়ে ঝাপায়ে পড়বি, তা না, সারা রাত ঘেউ ঘেউ করে মানুষ এর নিদ্রা নষ্ট করা। মাঝে মাঝে দরজা খুলে ঢিল মারি সাথে সাথে ঘরে ঢুকে পড়ি, বেশি ঢিল মারিনা। যদি রেগে যায়। আমি তো একাই চলা ফেরা করি, যদি ঢিল মারার দরুন চিনে রেখে পরে আমাকে একা পেয়ে অ্যাটাক করে। তখন কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। পেটে ১৪ টা ইঞ্জেকশন নেয়া যাবেনা। এই সব অর্বাচীন জানোয়ার দের জন্য তাই নিদ্রা দেবীর মুখ দর্শন হচ্ছেনা কিছুদিন যাবত। বাংলায় একটা কথা আছে – জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ইশ্বর- কোন হিসেবে এই কথাটা তারা উদ্ভব ঘটিয়েছে তা জানতে ইচ্ছে করছে। তাদের কে আমার ঘরে এনে কিছুদিন রাখলে হত। টানা কয়েকদিন বিড়াল, কুকুর, মোরগ এর ঠেলায় অঘুমা থাকলে তাদের জীবে দয়ার মহতপ্রান বাণী সাত আসমানে উড়াল দিত এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।