Blog

‘তারা তিনটা মেয়ে ছিল তিন ধরনের। তিনজনের একজন ছিল বেশ মর্ডান, ড্রেস আপ ও ছিল বেশ আধুনিক। একজন অতটা আধুনিকা না, বোরখা পড়ত। মুখ খোলা থাকত। ঘুরে ফিরে সে তিনটা বোরখাই পড়ত। মাথা একটু নিচু করে হাটত। আর একজন পড়ত হিজাব। সে এই আধুনিকা আর বোরখা ওয়ালির মাঝামাঝি অবস্থান করত। এদের তিন জনের একটাই মিল তিনজনই অনিন্দ্য সুন্দরী। এদের তিনজন কেই আমি সমান ভাবে ভালোবাসি।’

আমি হাসিব ভাই এর এই কথা শুনে তবদা খেয়ে গেলাম। এই লোক বলে কি। হাসিব ভাই আমার চেয়ে বছর আটেকের বড়। এক পাড়ায় থাকি অনেকদিন থেকে। তাই বেশ ভাল চেনা জানা আছে। তার সাথে প্রতি জুম্মায় দেখা হয়, আর দেখা হয় পাড়ার ক্লাবে, তাও সব সময় না। যেদিন পাকিস্তানের খেলা থাকে সেদিন উনি আসেন। বেশ আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখেন। রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভক্ত না হলেও ক্রিকেট পাকিস্তানের জিগরী ভক্ত। পাকিস্তান যদি জেতা খেলা হেরে যায় তখন তার গালাগালি এবং ক্রিকেট পাকিস্তান নিয়ে তার অদ্ভুত সব কথা এবং বিশ্লেষণ শুনে যে মজা পাবেনা সে আসলে মানুষই না। ২০০৭ বিশ্বকাপে যেবার ইন্ডিয়ার কাছে শেষ ওভারে হারলো পাকিস্তান সেবার তিনি বলেছিলেন, এই ম্যাচ ইচ্ছা করে হারছে, আফ্রিদি সব ম্যাচ ভাল করে শেষ ম্যাচে যে গুলায়ে দেবে এটা নাকি প্রি প্লানেড। মিসবাহ আর আফ্রিদি পাকিস্তান কে এটা বুঝাতে চেয়েছে যে তারা ছাড়া পাকিস্তান টিম অচল। এর পরের বার যখন ২০০৯ বিশ্বকাপ পাকিস্তান জিতল সেবার তিনি বললেন ২০০৭ এর ইন্ডিয়ার কাছে শেষ ওভারে হারার পর থেকে তিনি নাকি শান্তিতে ঘুনাতে পারেননি। যতবার ঘুমাতে গেছেন ততবার শেষ ওভারে মিসবাহ এর আউট চোখের সামনে চলে এসেছে। ২০০৯ বিশ্বকাপ জেতার পরে তিনি ঘুমাতে পেরেছেন।

আজকে পাকিস্তানের খেলাও নেই, তবুও তার সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। রাত সাড়ে দশটা বাজে। আমি বন্ধুদের আড্ডা থেকে ফিরছি। তিনিও হয়ত কোন কাজ শেষ করে ফিরছিলেন। হঠাৎ করেই নামলো ঝুম বৃষ্টি। আমরা ক্লাব ঘরে দৌড়ে ঢুকলাম। অবাক করা ব্যাপার হল ক্লাবে কেউ নেই। টিভি রুমে তালা দেয়া। বাইরের রুমে একটা কম পাওয়ারের লাইট জ্বলছে। ক্লাবের দেখাশোনার ছেলেটা কোথাও হয়ত গেছে। বৃষ্টির জন্য ফিরতে পারেনি। আমরা পাশাপাশি বসলাম। হঠাৎ করেই লোডশেডিং হল। পুরো পুরি গোরস্থানের আধার নেমে এল। ভাই তার ফোন এর লাইট জ্বালালেন। তার ফোনের ওয়ালপেপারে ফুট ফুটে একটা বাচ্চার ছবি। তিন চার বছর হবে বয়স। দেখলেই কোলে নিতে ইচ্ছে করে এমন বাচ্চাটা। আষাঢ় মাসের ঝুম বৃষ্টি কখন থামবে ঠিক নেই। সময় কাটাবার জন্য আমরা নানা বিষয়ে আলাপ শুরু করলাম। একটা সময় আলাপ এর বিষয় হয়ে গেল প্রেম, ভালবাসা। উনি আমাকে বললেন – “কি মিয়া লাইফে কয়টা প্রেম করছ?”

আমি- একটাও না। অত ভাল কপাল আমার না ভাই।

হাসিব ভাই- ধুর কি করলা লাইফে৷ কাউরে পছন্দ টছন্দো কর নাই।

আমি- সেই রকম বললে রোজই কাউকে না কাউকে পছন্দ হচ্ছে। একজনের উপর বেশ ভাল ক্রাশ খেয়েছিলাম তার বিয়ে হল লাস্ট ইয়ারে। এখন আর সেভাবে কারো দিকে মনোযোগ নাই।

হাসিব ভাই- একজনের উপরে ক্রাশ খাইছো, বিয়া হয়ে গেছে তাই বৈরাগ্য নিছো। তোমরা হালা এই যুগের পোলাপান কেমন জানি। আমারে দেখো। তিন তিনটা মাইয়ারে পছন্দ করতাম। এখনো করি সমান ভাবে।

এর পরেই উনি সেই কথাটা বললেন যেটা আমি শুরুতেই বলেছি। আমি তার সেই কথায় চুপ করে থাকলাম। আমার নীরবতা দেখে তিনি নিজেই বললেন- ” প্রেম ভালবাসা নিজের উপরে। আমি যে তিনজন রে ভালোবাসি তিনজনেরই বিয়া হয়ছে৷ একটার বিয়া হয়ছে তিনবার। তিনটা মেয়েরই প্রেমের বিয়ে। অথচ দেখো এই আমি অন্তর জুড়ে তাদের জন্য ভালবাসার সাগর নিয়ে বসে আছি অথচ আমার সাথে কিছু হলনা।”

আমি- ভাই একসাথে তিনজন কে কেমনে ভালবাসা যায়?

হাসিব ভাই- ইচ্ছা থাকলে যায়। মনের ইচ্ছাটাই বড়। এই মেয়ে তিনটার জন্য আমার বুক ভরা ভালবাসা এখনো সমান ভাবে আছে৷

আমি- ভাই ঘরে ভাবী, ফুট ফুটে একটা বাচ্চা রেখে আপনি এখনো তাদের ভালবাসেন?

হাসিব ভাই- হুম বাসি। ভালবাসার জন্য মন দরকার, ভাবী, বাল বাচ্চা কোন ফ্যাক্ট না এই খানে।

আমি- বাসায় ভাবী কি জানে আপনার এই ভালবাসার ব্যাপারে?

হাসিব ভাই- গাধার মত কথা বলবা না। তোমার ভাবী দেখতে সুন্দর কিন্ত মন সুন্দর না। ছোট মন। আমার মত বড় মনের হলে তাকে অবশ্যই জানাতাম।

আমি ভাই এর এই বড় মন, হৃদয় দেখে বিস্মিত হলাম। বিস্ময় গোপন রেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম – ” আচ্ছা ভাই ধরেন এই তিনজনের কেউ একজন সব ছেড়ে ছুড়ে আপনার কাছে এখন ফিরে আসতে চাইলো, আপনি কি তাকে কাছে টেনে নেবেন?

হাসিব ভাই- আরে ধুর কি বল। তাই আবার কেউ আসে নাকি, এটা অসম্ভব।

আমি- ধরেন আসল সব ছেড়ে দিয়ে। তখন কি তাকে ভালবেসে কাছে টেনে নেবেন।

হাসিব ভাই- পাগল নাকি। কাজ কাম আর পাইলাম না। ইউজড প্রোডাক্ট নিয়ে লাভ আছে নাকি?

আমি তার এবারের জবাব শুনে প্রথম বার তিনজনকে সমান ভাবে ভালোবাসার কথার চেয়েও বেশি অবাক হলাম। যে তীব্র ভালোবাসা তিনি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি তা আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়ান। এই রকম ভালবাসা তিনটা না হাজার তিনেক বয়ে বেড়ানোও কোন ব্যাপার না। বৃষ্টিটা হঠাৎ করে ধরে এল। আমি উনাকে কিছু না বলে বেড়িয়ে পড়লাম। আষাঢ় এর বৃষ্টির ঠান্ডা ফোটা মাথায় পড়ছে। একটু ঠান্ডা শিরশিরে অনুভুতি হচ্ছে। আকাশে চাঁদ নেই। তারা নেই। চার পাশ আধারে ঢাকা। হেটে চলেছি একা। দূরে কেউ কি আছে কদম ফুল হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়, কেউ নেই, কেউ নেই। হয়তোবা আছে। কেউ একজন আছে এটা ভেবে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পথ হাটতে ভাল লাগে। বড় ভাল লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *