আর অল্প কিছু সময়, রাত দ্বিপ্রহর পেরিয়ে গেলেই ক্যালেন্ডারের পাতা শেষ। নতুন ক্যালেন্ডার, নতুন ভোর। নতুন সকাল, নতুন দিন। আসলেও কি তাই? সব কিছুই আগের মতই। সব কিছু স্বাভাবিক। পরিবর্তন শুধু এক্টাই হবে, দিন পঞ্জিকার একটা সংখ্যা বদলে ২২ থেকে ২৩ হবে। এছাড়া বদলাবে না কিছুই। তবে এই মেগাসিটি ঢাকার কিছু অতি উতসাহি আধুনিক তরুন এর মাঝেই নতুন বর্ষকে বরন করবার জন্য লাল পানি সাথে প্রাণীজ আমিষে ভরপুর কাবাব নিয়ে রেডী হয়ে আছেন। অনেক তরুন তরুণী আবার একটু বেশি উদ্যমী, তারা আবার নিজেরা নিজেরাই নাচ গান করে এক বিছানায় রাত্রিযাপন করে সকালে বলে বেড়াবেন জাস্ট ফ্রেন্ডদের নিয়ে অসাম নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন হল। কে কিভাবে কি করছে আমার তাতে আগেও যায় আসেনায় এখনও আসেনা। নিজের টাকায় কে লাল পানি খেল, বা কে দাদাবাবু দের দেশের কাশির সিরাপ খেল, বা কে বার্মিজ লাল বড়ি খেল তাতে আমার খারাপ লাগার কিছু নাই। আমার কথা অন্য খানে যে যাই করে বছর পালন করুক তাতে এই ৩০ তারিখ থেকে বার বন্ধ, ৩১ তারিখ এই রাস্তা বন্ধ এই সব করবার মানে কি তা পুলিশ প্রশাসনই জানে। এই বংগাল দেশে যে কোন কিছুই শান্তি করে করা যাবেনা এটাই হক কথা। ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে ৩১ তারিখও যা নতুন বছরের ১ তারিখও তাই। ৩১ তারিখ বলে যে বিশেষ কিছু করতে হবে তা নয়। আসলে আমার কিছু করারও নাই। ৩১ তারিখ এও আমার জীবন নিরামিষ ছিল পরের নতুন বছরের নতুন দিনও নিরামিষই থাকবে। আর ইনজয়ই বা কি করব। আমার কাছে ভাল সময় কাটান মানেই ভাল কোন বই বা সুন্দর কোন মুভি বা টুকটাক লেখালেখি করা। যদি সেই হিসাব করি তাহলে ২২ মন্দ গেলনা। বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যের অসাধারন বেশ কিছু লেখা এই বছর গলাধঃকরণ করেছি। প্রথম উপন্যাস সায়াহ্ন প্রকাশিত হয়েছে এই বছরের বই মেলাতেই। নতুন উপন্যাসও প্রকাশিত হবে ২৩ এর বই মেলাতেই। ভাল বলতে এতটুকুই। নেগেটিভ অনেক কিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে। সেসব আলাপ বাদ। ছোট একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি।
সেদিন কারওয়ান বাজারের ঐতিহাসিক সিগনালে দাঁড়িয়ে আচ্ছি বাইক নিয়ে। ঐতিহাসিক এই কারণে যে এই সিগনাল ছাড়তে যে সময় লাগে তাতে ছোট করে একটা ভাত ঘুম দেয়া যায়। আমার পাশে বাইক নিয়ে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। মেয়েটা দেখতে বেশ। আমি হেলমেট এর হুড তুললাম শুধু মেয়েটাকে ভাল করে দেখব বলে। তারা দুজনে বেশ গল্প চালাচ্ছে। যে গল্প করছে সেটা শুনবার ইচ্ছা দমিয়ে রাখতে পারলাম না। সাথে সাথে গরম লাগছে এমন একটা ভং করে পুরো হেলমেট খুলে ফেললাম। এদিকে তখন কিন্ত তীব্র শীত চলছে। কিন্ত এত আকর্ষণীয় গল্প শোনবার জন্য হেলমেট কেন অন্য কিছুও খুলে ফেলা যায়।
মেয়েটা বলছে- দোস্ত থার্টি ফাস্ট এর প্লান কি
ছেলেটা – তেমন কোন প্লান নাইরে।
মেয়েটা- আমারও তেমন প্লান নাই। আর কি প্লান থাকবে বল, এই দেশে কোন কিছু করার উপায় আছে নাকি।
ছেলে- ঠিক ই বলসোস দোস্ত। নিও ইয়ার আসছে কারো কোন মাথা ব্যাথা নায়। চোখ ধাধানো আতসবাজি হবে, সারা রাত ওপেন এয়ার কনসার্ট হবে তা না। আগের দিন থেকেই বার বন্ধ। রাত দশটার মাঝে বাসায় ঢোক, বেশি রাতে বাইরে বের হওয়া নিষেধ। আরও কত কি।
মেয়ে- ঠিকিই বলেছিছ। লাইফ এ কোন ইনজয় নাই। তোর কি সত্যি কোন প্লান নাই?
ছেলে- প্লান তো ছিলই রে। বাট হবে না।
মেয়ে- কেন হবে না কেন?
ছেলে- সিয়াম এর বাপ মায় ইন্ডিয়ে গেছে। আমি, সাগর তানিম ঠিক করছিলাম একটা বোতল আনব সাথে নিজেরা মুরগী পুড়ায়ে বার বি কিউ করব। হইলনা। সিয়াম হালায় গার্ল ফ্রেন্ড রে লইয়া আইব।
মেয়ে- যা তাহলেতো ব্যাড নিউজ তোদের জন্য।
ছেলে- ব্যাড নারে দোস্ত ভেরী ব্যাড।
মেয়ে – আচ্ছা দোস্ত তুই আর আমি যদি যাই সিয়াম এর বাসায় কেমন হয়। ওরা ওদের মত থাকল। তুই আমি আমাদের মত থাকলাম। ইনজয় করলাম।
আমি দেখলাম ছেলেটা বাইক এ বসেই খুশিতে দুলে উঠল।
ছেলেটা- তাহলে তো নিউ ইয়ার ছেলিব্রেশন্টা জোশ হয়।
মেয়েটা দুষ্ট একটা হাসি দেয়। আমার মুখ থেকে আপনা থেকেই বের হয়ে যায় we are just friend.
ছেলেটা এটা শুনে ফেলে এবং বুঝে যায় আমি এতক্ষন তাদের কথা বিবিসির সাংবাদিকের মত পাশে থেকে শুনছি। সে রেগে যায়। আমাকে বেশ জোরে শব্দ করে বলে- এই কি বললেন?
আমি জবাব দেইনা। বাইকের পিছনে সুন্দরি নিয়ে ঘুরলে মনের সাহস গায়ের জোর দুটোই জ্যামিতিক হারে বাড়ে। এদের ঘাঁটানো ঠিক না। আমি দ্রুত হেলমেট পড়ি। ছেলেটা গতবারের চেয়েও জোর গলায় কিছু বলে। আমি বুঝতে পারছি এক বাক্য ইংরেজী বলে কি ফাসা ফাসলাম। ছেলেটা এবার গালি দিল মনে হয়। মারবে নাকি আল্লাহ জানে। ওহ না পারবে না। সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে কেটে পড়তে পারব। এবং বিনা বাক্য ব্যয়ে কেটে পড়লাম। ৩১ তারিখ এই রকম কত জাস্ট ফ্রেন্ড দের গল্পই না রচিত হবে।
বাদ দেই প্যাচাল। সবাই কে আগত নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শুভ রাত্রি।